জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর থেকে
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে লক্ষ্মীপুরে গত কয়েক দিন থেকে অভিযান পরিচালনা করছে প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তারই পরিপ্রেক্ষিতে জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে আসছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুম ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। এ ছাড়া জেলার রায়পুর উপজেলায়ও মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অভিযান পরিচালনা করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরীন চৌধুরী।
এদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকে জনসাধারণের মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সব সরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে গ্রহণ করা হয়েছে ‘নো-মাস্ক নো-সার্ভিস’ পলিসি। মানুষকে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি পালনে বাধ্য করতে লক্ষ্মীপুরে চলছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। মাস্ক না পরলে করা হচ্ছে জরিমানাও। এতে বাজারে মাস্কের চাহিদা ও বিক্রি দুটোই বেড়ে গেছে। এ সুযোগে সব ধরনের মাস্কের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। বেড়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দামও।
জেলা প্রশাসক, সদর উপজেলা ও রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে যানা যায়, লক্ষ্মীপুরে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ ‘মাস্ক পরুন, সেবা নিন’ শীর্ষক প্রচারণা বাস্তবায়ন ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
এর মধ্যে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাসুম জেলা শহরের উত্তর তেমুহনী ও চকবাজার এলাকায় বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে ৫৬ জনকে ৫ হাজার ৭৫০ টাকা জরিমানা করেন। রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাবরীন চৌধুরী রায়পুর শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ৩৮ জনকে ৩ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করেছেন।
এ ছাড়া জেলা প্রাশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট বনি আমিন ও নিলুপা ইয়াসমীন নিপা শহরের ঝুমুর, উত্তর হেমুহনী ও মান্দারী বাজার এলাকায় শতাধিক ব্যাক্তিকে মাস্ক না পরে বাইরে আসায় ৮ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা করেন। এ সময় সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনানার পাশাপাশি প্রশাসনের পক্ষ থেকে জন সাধারণের মাঝে মাস্ক বিতরণ করা হয়। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জোরালো অভিযান পরিচালনা করা হলোও জেলা শহরে চলাচল করা শতকরা ৩০-৪০ ভাগ লোক এখনো মাস্ক ছাড়া চলাচল করছেন। সচেতন মহল বলছেন, যতদিন পর্যন্ত মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি না হবে ততদিন পর্যন্ত জনসাধারণের কল্যাণে প্রশাসনকে অভিযান পরিচালনা করে যেতে হবে।
অপর দিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় প্রশাসনের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে জনসাধারণেকে মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করতে কাজ করায় লক্ষ্মীপুরে বেড়ে গেছে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার। মানুষের মাঝে ব্যবহার বাড়ায় বাজারেও বেড়েছে মাস্কের চাহিদা এবং বিক্রি। এ সুযোগে সব ধরনের মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের বিভিন্ন ওষুধের দোকান ও ফার্মেসিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাঝে কিছুদিন মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ করোনা প্রতিরোধ সামগ্রীর বিক্রি কমে গেলেও সম্প্রতি প্রশাসনের অভিযানে তা আবার বেড়েছে। তবে বিক্রি বেড়ে গেলেও এসব পণ্যের সরবরাহে কোন ঘাটতি নেই। তবু কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে বেড়ে গেছে মাস্কের দাম। কোথাও কোথাও সার্জিক্যাল মাস্ক ও সাধারণ ডিসপোজিবল মাস্কের দাম বক্স প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেশি রাখা হচ্ছে। আর দোকানিরা প্রতি পিচ মাস্ক বিক্রি করছেন ১০ টাকায়। আগে ১০ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হওয়া কাপড়ের মাস্ক এখন ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া বাজারে সব ধরণের স্যানিটাইজারের দামও ঊর্ধমূখি।
দোকানি মো. সফি উল্যা বলেন, সরকার মাস্ক পরার বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। প্রতিদিন জেলা শহরে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতে অভিযান পরিচালনা করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এতে জনগণের মাঝে মাস্ক ব্যবহার বেড়েছে। তাই মাস্কের চাহিদা বাড়ায় দাম আগের চেয়ে বেড়ে গেছে।
মাস্ক কিনতে আসা এনামুল হক বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা মাস্কের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে মাস্ক না ব্যবহারকারীদের পাশাপাশি মাস্ক বিক্রয়কারী অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাসুম বলেন, সবার বাধ্যতামূলক মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের অভিযান চলছে। অভিযানে যাদের মাস্ক ছিল না তাদের সবাইকে সচেতন করা হয়েছে। ঘরের বাইরে মাস্ক ছাড়া কেউ যেন বের না হয় সেজন্য অনুরোধ করা হয়েছে। মাস্ক না পরে বাইরে আসা ব্যক্তিদের সতর্ক করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করছে। লক্ষ্মীপুরবাসীর কল্যাণে করোনা ভাইরাসের সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে প্রশাসনের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া এই সুযোগে যেসব অসাধু ব্যবসায়ী মাস্কের দাম বাড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালনা করা হবে।